হযরত আলী (রা.)-এর প্রজ্ঞা ও বীরত্ব
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ঘনিষ্ঠ অনুসারী যে চারজন বিশেষ মর্যাদাবান সাহাবী খোলাফায়ে রাশেদীন হিসেবে মুসলিম উম্মার কাছে সম্মানিত, হযরত আলী (রা.) হলেন তাঁদের অন্যতম। তিনি মহানবী (সা.)-এর জামাতা। তিনি যেমন ছিলেন বীর যোদ্ধা তেমনি ছিলেন জ্ঞানী ও বিদ্বান। রাসূল (সা.) তাঁকে ‘জ্ঞানের দরজা’ আখ্যায়িত করেন। শৌর্য-বীর্যের জন্য তিনি ‘আসাদুল্লাহ’ আল্লাহর সিংহ ও ‘ইয়াদুল্লাহ’ আল্লাহর হাত উপাধিতে ভূষিত হন। তিনি ৫৮৬টি হাদীস বর্ণনা করেন এবং তিরাশিটি সশস্ত্র জিহাদে বিজয় লাভ করেন।
সাহাবীদের মধ্যে হযরত আলী (রা.) অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজনীতি বিশেষজ্ঞ এবং আরবী ভাষা ও সাহিত্যে ছিলেন সুপন্ডিত। অনন্য জ্ঞান প্রজ্ঞার পাশাপাশি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিশেষ নৈকট্যে থেকে সূরা নাজিলের প্রেক্ষেতসহ আয়াতসমূহের অর্থ ও তাৎপর্য হৃদয়ঙ্গম করার সুযোগ লাভ করেন তিনি। তিনি আল কুরআনের অন্যতম সংকলক। হযরত ওমর (রা.) কে হিজরত হতে মুসলিম সন গণনার পরামর্শ দেন তিনিই। হযরত ওমর (রা.) বলেছেন, ‘আলী না হলে ওমর ধ্বংস হতো।’
আলী (রা.)-এর অসাধারণ বাগ্মিতা ও সাহসিকতার কাছে সকল প্রতিদ্বন্দ্বীই হার মানতো। তিনি ছিলেন সুকবি। তাঁর কবিতার বিভিন্ন সংকলন হয়েছে। ‘দীওয়ান-ই-আলী’ তাঁর বিশ্ববিখ্যাত কাব্য সংকলন। মুসলিম বিশ্বে তো বটেই, এর বাইরেও তাঁর কাব্য সমাদৃত হয়েছে। সার্বজনীন ও কালোত্তীর্ণ বাণী ও শিল্পসৌন্দর্যে এ গ্রন্থ কালজয়ী।
হযরত আলী (রা.) মানবিক সকল মহত গুণে ও কর্মে অত্যুজ্জ্বল এক মর্দে মুজাহিদ। তাঁর অসাধারণ বিচারবুদ্ধি প্রজ্ঞা, ন্যায়বিচার ধৈর্য, বীরত্ব ও ত্যাগ সাধনা অতুলনীয়। তিনি মানবতার মূর্তপ্রতীক।
হযরত আলী (রা.)-এর মতো এত সব বড় বড় মহত গুণে উজ্জ্বল ব্যক্তি আর নেই। মুসলিম জাতির মর্যাদা ও গৌরব সমুন্নত করে রেখেছেন তিনি ইতিহাসে। আলী (রা.) সত্যি-আলী। এমন বিশাল মহত ব্যক্তির মহত্ত্ব ও কার্যাবলী যত বেশি আলোচনা করা যায়, যত বেশি প্রচার করা যায়, পাঠকগণ ততবেশি অনুপ্রাণিত ও উজ্জীবিত হবেন।
এ উদ্দেশ্য সামনে রেখে হযরত আলী (রা.)-এর অসাধারণ প্রজ্ঞা সূক্ষ্ম বিচার-বুদ্ধি, সাহসিকতা, বীরত্ব ত্যাগ-সাধনা, ন্যায় বিচার ও মানবতা বোধ সম্পর্কে টুকরো টুকরো কিছু চমকপ্রদ ঘটনা গল্পাকারে এ গ্রন্থে বর্ণনা করা হয়েছে। তাঁর বিশ্ববিখ্যাত ‘দীওয়ান-ই-আলী’ থেকে কয়েকটি কবিতা সংযোজন করে দেয়া হয়েছে। কবিতার টুকরোগুলো মনিমুক্তার মতো উজ্জ্বল ও মূল্যবান উপদেশপূর্ণ। আশা করি সবার ভালো লাগবে, বিশেষ করে তরুণ সমাজ প্রেরণা পাবেন।
মহানবী (সা.)-এর বাণী
এক. আমি প্রজ্ঞার নগরী আর আলী তার তোরণ।
দুই. হে আলী, তোমার সাথে আমার বন্ধন, তুমি আমার ভাই এ জগতে এবং পরজগতে।
তিন. যে ব্যক্তি আমার বন্ধু সে আলীরও বন্ধু, আর যে আলীর বন্ধু সে আমারও বন্ধু।
চার. আলী আমার একাংশ আর আমি আলীর একাংশ।
পাঁচ. আলীর তলোয়ারের এক আঘাত আসমান ও জমিনের সবার ইবাদতের চেয়ে শ্রেয়।
ছয়. হারুন যেমন মুসার প্রতিনিধি, আমার পক্ষ থেকে তুমিও সেরূপ প্রতিনিধি।
পরিচয়: হযরত আলী (রা.)। শৌর্যে-বীর্যে আশ্চর্য রকম দীপ্তিময় একটি নাম। বিশ্বের ইতিহাসে অনেক জ্ঞানী-গুণী, ধ্যানী সাধক কবি সাহিত্যিক, রাষ্ট্রনায়ক, সাহসী সেনানায়ক বীর যোদ্ধা এবং আরো অনেক মহত গুণের অধিকারী ব্যক্তি রয়েছেন। কিন্তু হযরত আলী (রা.)-এর মতো এত সব বড় বড় মহত গুণের উজ্জ্বল ব্যক্তি আর নেই। তিনি অতুলনীয়। আলী (রা.) সত্যি-আলী। মুসলিম জাতির মর্যাদা এবং গৌরব সমুন্নত করে রেখেছেন ইতিহাসে।
মহানবী (সা.) নবুওত প্রাপ্তির দশ বছর আগে হযরত আলী (রা.) জন্মগ্রহণ করেন। প্রিয় রাসূল (সা.)-এর রক্তের সাথে তাঁর ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। আলীর পিতা আবু তালিব মুহাম্মদ (সা.)-এর আপন চাচা। সেই সূত্রে তিনি নবীজীর আপন চাচাতো ভাই। তাঁর মা ফাতিমা বিনতে আসাদ নবীজীর ফুফু।
হযরত আলীর (রা.) জন্ম হয়েছিল কাবা ঘরে। কারো কারো মতে কাবা শরীফের ভিতরে নয়, পাশে কোন হাশেমীর ঘরে। তবে একথা সত্য যে, তাঁর জন্মস্থানে পবিত্র কাবা ঘরের ছোঁয়া ছিল। এই পবিত্র পরশই ক্রমে তাঁর জীবনকে করেছে উজ্জ্বল ও মহান। তাঁর নানার নাম ছিল আসাদ। তাই তাঁর মাতা ফাতিমা ছেলের নাম রেখেছিলেন-আসাদ। ‘আসাদ’ অর্থ সিংহ। বস্ত্তত হযরত আলীর জীবনী আলোচনা করলে এই নামের সার্থকতা উপলব্ধি করা যায়। সিংহের মতোই তেজ আর শক্তি ছিল তাঁর।
ছেলের ‘আসাদ’ নামটি পিতা আবু তালিবের পছন্দ হয়নি। ভাবলেন, তাঁর ছেলের নাম হবে আরো সুন্দর, আরো মিষ্টি। কি দেয়া যায় নাম!
তিনি ছেলের নাম রাখলেন-আলী।
আলী শব্দের অর্থ-সমুন্নত।
তাঁর ছেলে সমস্ত ভয়ভীতি, লোভলালসার ঊর্ধ্বে। হিংসা ঘৃণা ছুবে না তাঁর পা। ত্যাগে সাধনায় জ্ঞানে গুণে হবে অতুলনীয়।
পিতার দেয়া নামেরও তিনি ছিলেন সার্থক রূপকার।
শৈশবে আলী (রা.)-এর পেট কিছুটা মোটা ছিল। এ নিয়ে সমবয়সীরা তাঁকে যথেষ্ট হাসি ঠাট্টা করত। তাতে তিনি মোটেও চটতেন না। বরং তাদের হাসিপরিহাস যেন নিজেও উপভোগ করতেন। আবু সাঈদ তামীমী বলেছেন, আমরা তাঁকে পেটমোটা বলে উপহাস করলে তিনি মোটেও রেগে যেতেন না, উল্টো পরিহাস করে বলতেন, ‘হ্যাঁ, পেটটি আমার মোটাই বটে, তবে তা বেশি খাবার কারণে নয়। এতে অনেক বিদ্যাবুদ্ধি আর ইলম জমা আছে বলেই এমন মোটা দেখাচ্ছে।
মহানবী (সা.) আলীকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। একবার আবদুল্লাহ ইবন আববাস জিজ্ঞেস করেন, আববাস মহানবী (সা.) কয়জন পুত্র ছিলেন। সবাই বাল্যকালে মারা গেছেন। তবু কোনটিকে তিনি সবচেয়ে বেশি ভালবাসতেন? হযরত আববাস (রা.) জবাব দেন-আলীকে। আব্দুল্লাহ আবার বলেন, আববা, আমি তো তাঁর পুত্রদের সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করেছি।
হযরত আববাস বলেন, মহানবী (সা.) তাঁর পুত্রদের চেয়ে আলীকেই বেশি ভালবাসতেন। তিনি বাইরে না গেলে আলীকে আমি অতি অল্প সময়ের জন্যেও তাঁর কাছ ছাড়া হতে দেখিনি। আলী মহানবীর প্রতি যেরূপ অনুরক্ত ও শ্রদ্ধাশীল ছিলেন, কোনো পুত্রকেও আমি পিতার প্রতি তত অনুরক্ত ও ভক্তি পরায়ণ দেখিনি।
হযরত আলী (রা.) দশ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে মজার একটি ঘটনা আছে। মহানবীর ঘরের দিকে চোখ পড়ে বালক আলীর। চমকে ওঠলেন তিনি। বিস্ময়ে বড় বড় চোখ করে তাকালেন। এমন কান্ড আগে তিনি দেখেননি। রাসূল (সা.) আর বিবি খাদিজা (রা.) তাঁদের কপাল মাটিতে ঠেকাচ্ছেন। অথচ সামনে কেউ নেই, কিছু নেই। সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রশংসা করছেন। প্রার্থনা শেষ হলে আলী তাঁদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন বিষয়টির কথা। মহানবী (সা.) মধুর হেসে বললেন, আমরা এক আল্লাহর ইবাদত করেছি।
তিনি তাঁকেও সত্যের ছায়ায় আসার পরামর্শ দিলেন। এবার ভাবনায় পড়লেন আলী। বাপদাদার ধর্ম মূর্তিপূজা ছোট থেকে দেখে আসছেন। এখন বিনা চিন্তায় কি করে একে গ্রহণ করবেন? ইসলাম যে সত্যের কথা বলছে তা তিনি বুঝেছেন। তবু কেমন একটা বাধো বাধো লাগে। বাবাকে না জানিয়ে তো কিছু বলা যায় না। তাই বাবার অনুমতি নেয়ার জন্য মহানবী (সা.)-এর কাছে সময় চেয়ে নেন।
মহানবী এবার ভাল করে বুঝালেন আলীকে। বললেন, এ ব্যপারে কারো সাথে আলোচনা করা ঠিক হবে না। তুমি নিজেই গভীরভাবে চিন্তা করো। নিজের মন থেকেই উত্তর পেয়ে যাবে। সত্যি সত্যিই তিনি উত্তর পেয়ে গেলেন। তাঁর মনে পড়লো পিতার কথা। পিতা আগেই বলেছিলেন, মুহাম্মদ (সা.)-এর যে কোন আদেশ বিনাদ্বিধায় মেনে নেবে। তাই পরেরদিন ভোরে তিনি মহানবী (সা.)-এর কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। পঁচিশ বছর বয়সে হযরত আলী (রা.) রাসূল (সা.)-এর আদুরে কন্যা ফাতিমাকে বিয়ে করেন। ফাতিমার বয়স তখন পনের কি ষোল।
হযরত আলী (রা.) আপন সত্তাকে আল্লাহর নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সত্তার মধ্যে বিলীন করে দিয়েছিলেন। তাঁর জীবন ছিল এক দর্পন স্বরূপ। এই দর্পনের মধ্যে রাসূল (সা.)-এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই প্রতিফলিত হতো। আল্লাহর রাসূলের সমগ্র রূপটি যদি কোনো মানুষের মধ্যে দেখার ইচ্ছে হয়, তবে হযরত আলীর চরিত্র এবং জীবন যাত্রার দিকে তাকাতে হবে।
অপত্য স্নেহ আদর ও ভালবাসায় নবী (সা.) আলীকে লালন পালন করেন। তাঁরই শিক্ষায় আলীর চরিত্র মহামানবীয় গুণে মাধুর্যমন্ডিত হয়ে ওঠে।
হযরত আলী (রা.) খলিফা ছিলেন, সেনানায়ক ছিলেন, পন্ডিত ছিলেন, কবি ছিলেন, বাগ্মী ছিলেন এবং সব কিছুর উপরে তিনি ছিলেন মানুষ। মানব গুণের চরম ও পরম উৎকর্ষ সাধিত হয়েছিল তাঁর মধ্যে।
নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনের অপর এক সাফল্য আলীর মানস গঠন। তাঁরই যতন্ন পরিশ্রম হাতের ছোঁয়া এবং সাধনার ফসল আলী (রা.) মানবতার গৌরব। সাধনার পথে সিদ্ধির পথে অগ্রসর হতে হতে মানুষ এমন স্তরে উন্নীত হয় যখন হয়তো স্রষ্টা এবং সৃষ্টির মধ্যে অন্তরাল থাকে না। স্রষ্টা আপন সৃষ্টিতে গর্ববোধ করেন।
রোম সম্রাটের প্রশ্নের জবাব: হযরত ওমর (রা.) খেলাফত কালে রোম সম্রাট কয়েকটি জটিল প্রশ্ন দূতের মাধ্যমে হযরত ওমর (রা.)-এর কাছে পাঠান। খলিফা প্রশ্নগুলো পাঠ করে বুঝতে পারলেন এর জবাব দেয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তবে কে জবাব দিবেন? জবাব তো দিতেই হবে। খলিফা সোজা চলে গেলেন হযরত আলীর (রা.) কাছে। তাঁকে দেখালেন প্রশ্নগুলো। হযরত আলী (রা.) প্রশ্নগুলো পাঠ করে তখনই খুব দ্রুত কাগজে জবাব লিখে খলিফার হাতে তুলে দেন। খলিফা কাগজগুলো ভাঁজ করে দূতের হাতে দেন। দূত জিজ্ঞেস করেন, জবাবদাতা কে?
হযরত ওমর (রা.) বলেন, আলী। ইনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পিতৃব্যপুত্র, জামাতা এবং বন্ধু।
মুক্তি পেয়ে গেল কয়েদী: ভাষা আল্লাহর এক অপরিসীম নিয়ামত। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে অন্যতম পার্থক্য ভাষা। একই ভাষার একই শব্দের রয়েছে নানা রকম অর্থ ও মর্ম। কখনো ব্যবহার হয় মূল অর্থে। আবার কখনো ব্যবহার হয় রূপক অর্থে। বক্তার ভাষার অর্থ সঠিকভাবে বুঝতে না পারলে ঘটে বিপদ। ভাষার মারপ্যাঁচ বুঝতে না পালে শ্রোতার যেমন লজ্জা পেতে হয়, বক্তার ভাগ্যে ঘটে যায় জেল-হাজত বাস। এমনি এক ঘটনা ঘটেছিল দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমরের সময়ে। এক ব্যক্তি উপস্থিত হলো তাঁর দরবারে। সে নির্ভীক চিত্তে খলিফাকে উদ্দেশ্য করে বললো, নিশ্চয় আমি ফিতনাকে ভালোবাসি, হককে অপছন্দ করি এবং যা দেখিনি, তার সাক্ষ্য প্রদান করি।
সাংঘাতিক কথা!
সে আর যায় কোথায়!
এত বড় দুঃসাহস খলিফা ওমরের সামনে। যাকে মহানবী (সা.) মুসলিম উম্মার মধ্যে আল্লাহর নির্দেশ পালনে কঠোরতম ব্যক্তি বলেছেন। তাঁর সামনে থেকে কি এই ব্যক্তি রেহাই পেতে পারে? সে নিজেই তিনটি অন্যায়ের স্বীকৃতি প্রদান করছে। প্রথম কথা, যে ফিতনাকে ভালোবাসে, যে ভালোবাসার কোনো প্রশ্নই ওঠতে পারে না। দ্বিতীয় কথা, যে হক অপছন্দ করে, অথচ হককে পছন্দ করাই স্বাভাবিক। তৃতীয় কথা, যে না দেখে সাক্ষ্য প্রদান করে, যা গুরুতর অন্যায়। তাই খলিফা ওমর (রা.) তখনই তাকে বন্দী করে পাঠালেন কয়েদ খানায়।
লোকটি তার বক্তব্যে কোনো ব্যাখ্যা প্রদান করল না। আবার খলিফাও স্বীকারোক্তি দিচ্ছেন বিধায় কোনো রকম সাক্ষ্য প্রমাণের প্রয়োজন মনে করা হলো না। চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো সংবাদটা। মহান খলিফা ওমর, যিনি সত্য প্রতিষ্ঠায় আর অন্যায় মিথ্যা দূরীকরণে বজ্রকঠোর তাঁর সামনে এমন নির্ভয় স্বীকারোক্তি করে লোকটা শুধু অন্যায়ই করেনি, এর জন্য শুধু জেল নয়, আরো কঠিন শাস্তি হওয়া দরকার। জনগণ তার সে কঠিন শাস্তির দিন গুনছে।
মহাজ্ঞানী রহস্য উন্মোচনকারী ও সূক্ষ্মদর্শী হযরত আলী (রা.) শুনতে পেলেন ঘটনাটা। তিনি সাথে সাথেই বুঝতে পারলেন লোকটির কথার মর্ম। তিনি সোজা চলে গেলেন ওমরের দরবারে। শুরু করলেন কথাবার্তা।
হযরত আলী : হে আমীরুল মুমিনীন, আপনি অন্যায়ভাবে লোকটিকে বন্দী করেছেন।
খলিফা : কেন? সে নিজ মুখে স্বীকার করেছে, একটি নয়, তিনটি অপরাধ করেছে।
হযরত আলী : লোকটি বলেছে, আমি ফিতনাকে ভালোবাসী। এর দ্বারা সে বুঝাতে চাচ্ছে যে, সে সম্পদ ও সন্তানকে ভালোবাসে। কেন না, আল্লাহ বলেছেন, নিশ্চয় তোমাদের সম্পদরাজি ও সন্তানাদি হচ্ছে ফিতনা। লোকটি আরো বলেছে যে, সে হককে অপছন্দ করে। এ কথার দ্বারা সে বুঝাচ্ছে যে, সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে। যা অবশ্যই হক ও চিরসত্য। কেন না, আল্লাহ বলেছেন, মৃত্যু যন্ত্রণা অবশ্যই আসবে। তৃতীয় কথা, লোকটি বলেছে, আমি যা দেখিনি, তা সাক্ষ্য দিই। একথার অর্থ হলো, সে এ সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ আছেন এবং এক, অথচ সে তাঁকে দেখেনি।
হযরত আলী (রা.)-এর এই ব্যাখ্যা শুনে খলিফা ওমর (রা.) লোকটির কথার মর্ম বুঝতে পারলেন এবং তখনি চিৎকার দিয়ে বলে ওঠলেন, ‘হায়! যদি না হতো আলী, তাহলে অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যেতো ওমর।’ এরপর কি আর লোকটি হাজতে থাকতে পারে? সাথে সাথেই সে মুক্তি পেল। লোকমুখে চারদিকে প্রচারিত হতে লাগলো হযরত আলী (রা.)-এর তত্ত্বজ্ঞান আর অসাধারণ বিচার ক্ষমার কথা। (চলবে)